বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আত্মপ্রকাশের দিনে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন ‘যুক্তফ্রন্ট’। সৈয়দ ইবরাহিম কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান। আর নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের সভাপতি হয়েছেন তিনি।
আজ (২২ নভেম্বর) বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ জোটের আত্ম প্রকাশ হয়। কল্যাণ পার্টির সঙ্গে নতুন গঠিত যুক্তফ্রন্টে আছে জাতীয় পার্টি (মতিন), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, যুক্ত ফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার তারিখ ৩০ নভেম্বর থেকে পেছানো হতে পারে। নির্বাচনের ভোট গ্রহণসহ অন্যান্য তারিখও পেছানো হতে পারে। এই মুহূর্তে আমার রাজনৈতিক অক্ষমতা এই যে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে পেরে উঠছি না। ২৮ অক্টোবরের পর সুনির্দিষ্ট একটা অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন– চুপ থাকব নাকি বিকল্প ব্যবস্থা নেবো। আমি বিকল্প অবস্থান নিয়েছি, নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকার ২০২৪ সালের নির্বাচন জাতির সামনে ও আন্তর্জাতিক মহলকে গ্রহণযোগ্য দেখাতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের তুলনায় অধিকতর অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। আশা করছি, বর্তমান সরকার তাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করবে না। ভুলের পুনরাবৃত্তি করলে তা সরকারের বিপক্ষে যাবে। জনগণের কষ্ট বাড়াবে, আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। সরকার সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে আরও বেশি সচেষ্ট হবে। এত দিন দাবি ছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ব্যতীত নির্বাচনে অংশ নেব না। এখন কেন নিচ্ছি? এর উত্তর হচ্ছে, দাবি আদায়ে সফল না হয়ে আমাদের সামনে দুটি বিকল্প ছিল। এক চুপ থাকা, দুই নির্বাচনে অংশ নিয়ে অবদান রাখার সুযোগ নেওয়া। আমরা অবদান রাখার সুযোগ নিতে চাই। এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসছে না। আমি চুপ না থেকে যা আছে তার মধ্যে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সংলাপের দরজা যেন কোনো পক্ষই বন্ধ করবেন না বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সংলাপ ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মহল থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, দেশীয় নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেসব প্রস্তাব করেছেন, সেগুলোর ভিত্তিতে সব পক্ষই যেন উদ্যোগ নেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদের আন্দোলন দমনে মাত্রাতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করছে, তা বন্ধ করার আহ্বান জানাই। গত ১৬ বছরে যোগ্যতা, সাহস ও আগ্রহ থাকার পরও অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সংসদে যেতে পারিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হবে, কারও পছন্দ হবে না। সমালোচনা থাকবে। দালাল, বিশ্বাসঘাতক, মীর জাফর হয়ে গেছি বলে সমালোচনা হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমালোচনা করবেন। আগামী কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংকটময়। জোটের দলগুলো যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে, নির্বাচনের পর বিরোধী দলের বেঞ্চে বসাই আমাদের আগ্রহ।