শিরোপার আক্ষেপ থাকলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ রাঙিয়েছেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি। প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি ম্যাচে একাদশেই জায়গা পাননি। পরে সুযোগ পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকও তিনি। শামির ঝুলিতে ২৪ উইকেট। ভারতের বিশ্বকাপ ইতিহাসেও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী এখন তিনি।
শামি ছাড়াও ইনজুরি থেকে ফিরে দাপট দেখিয়েছেন জসপ্রীত বুমরাহ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচ বাদ দিলে আসরজুড়েই প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য ত্রাস ছিলেন এই পেসারদ্বয়। বিশ্বকাপে ভারতীয় পেসারদের সাফল্য দেখে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার হাসান রাজা মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভারতকে আলাদা বল দেওয়া হচ্ছে।’ কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম একটি টিভি শোতে বিষয়টির প্রতিবাদ করলেও থামেননি হাসান।
যা নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন মোহাম্মদ শামি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে আমি খেলিনি। কিন্তু খেলা শুরু করার পরে প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাই। পরের ম্যাচে পাই চার উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে আবার পাঁচ উইকেট। এই বোলিং দেখে পাকিস্তানের একজন মন্তব্য করেছিলেন, আমাদের নাকি আলাদা বল দেওয়া হচ্ছে। ওয়াসিম (আকরাম) ভাই টিভি শো-এ বুঝিয়েছিলেন, দু’দলের বোলাররা একটি বাক্স থেকে বল বেছে নেয়। তারপরেও সেই ব্যক্তি কটু মন্তব্য করতে ছাড়েননি।’
আরও যোগ করেন, ‘আমার তো মনে হয় ওরা মানতেই পারে না ওদের চেয়েও কেউ ভালো কিছু করতে পারে। আমাদের সাফল্য সহ্যই হয় না ওদের। মানতাম যদি সে সাধারণ মানুষ হত। কিন্তু সেও তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। তারপরেও এ রকম মন্তব্য করলে সকলে তো হাসবেই।’
বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে সুযোগ না পেয়েও কোনো আক্ষেপ নেই শামির। নিজের মাইলফলক নিয়ে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া দেখার পরে বুঝতে পারি যে নজির গড়েছি। না হলে রেকর্ড নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা থাকে না। দল যে দায়িত্ব দেয়, সেটা পূরণ করার চেষ্টা করি। দলের কেউই কখনও পরিসংখ্যান দেখে খেলে না। আমরা সবাই দায়িত্ব পালন করার জন্য খেলি। কারণ, ক্রিকেটে ব্যক্তির আগে সব সময় এগিয়ে থাকবে দল।’
ম্যাচের আগে কখনও পিচ দেখেন না শামি। কারণ, বল না করলে তিনি বোঝেন না, পিচ কী রকম আচরণ করবে। ভারতীয় তারকার কথায়, ‘সাধারণত মাঠে গিয়েই বোলাররা আগে পিচ দেখে। আমি কখনও পিচ দেখি না। কারণ, বল করার আগে বোঝাও যায় না পিচ কেমন আচরণ করবে। আমি শুধু শুধু কেন পিচ দেখে নিজের ওপরে চাপ সৃষ্টি করব? তাই একদম চাপমুক্ত থাকা উচিত। উত্তেজিত হয়ে কোনো লাভ নেই। তবেই ভালো খেলা সম্ভব।’
টানা চার ম্যাচ বাইরে থাকার পরে কীভাবে ফিরে এলেন তিনি? শামির উত্তর, ‘শুরুতে বলা হয়েছিল আমি প্রত্যেকটি ম্যাচ খেলব। কিন্তু দু’টো ম্যাচ গেল, তিনটি ম্যাচ গেল, চারটি ম্যাচের পরেও সুযোগ পাচ্ছিলাম না। চার ম্যাচ দলের বাইরে যে কেউ থাকতে পারে। কিন্তু হতাশ হয়ে গেলে তো ফিরে আসার শক্তিটা থাকবে না। মানসিক ভাবে শক্তিশালী হতে হবে। আমি তাই চেষ্টা করেছি। দল যখন ভাল খেলছিল, আমার মধ্যেও ভাল কিছু করার তাগিদ বেড়েছিল। অদ্ভুত তৃপ্তি হত সকলকে ভাল খেলতে দেখে।’
বিরিয়ানি এক সময় ছিল শামির প্রিয় খাবার। কেকেআরে থাকাকালীন লোভ সামলাতে পারতেন না। শামি বলছিলেন, ‘আমি খেতে প্রচণ্ড ভালোবাসি। বিরিয়ানির সঙ্গে অনেকেই আমার নামটা জড়িয়ে ফেলেছেন। আসলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে যখন খেলতাম, তখন প্রায় বেশিরভাগ দিনই বিরিয়ানি খেতাম। সামনেই ছিল আরসালান। কে ছাড়তে পারে বলুন তো? আমরা বাইপাসের ধারে একটা হোটেলে থাকতাম। পাশেই বিরিয়ানির বড় সেই দোকান। মালিক আমার বন্ধু ছিল। এমনও হত, না চাইলেও বিরিয়ানি পাঠিয়ে দিত। সেটা চেখে দেখতাম। আসলে চার-পাঁচজন যারা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতাম, তাদের একটা গ্রুপ ছিল। সবাই মিলে ওই এক প্লেট বিরিয়ানি হয়তো খাওয়া হলো। উৎসবের দিনে সবাই এক প্লেট করেই বিরিয়ানি খেত।’