আন্তর্জাতিক

আরো এক খালিস্তানপন্থীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ; ভারত বলছে, ‘তদন্ত হবে’

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত খালিস্তানপন্থী এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি তার জবাব দিয়েছে। এর আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক একজন খালিস্তানপন্থী নেতাকে মার্কিন মুলুকে বসেই হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, আর এ নিয়ে ভারতকে সতর্কও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েকজন অপরাধী ও সন্ত্রাসীসহ অন্য কয়েকজনের সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছে, সেগুলি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমস দাবি করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সেদেশের নাগরিক একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র তারা ব্যর্থ করেছে এবং ওই ষড়যন্ত্রে ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। ওই প্রতিবেদনে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, ওই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার নাগরিক গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু, যিনি ‘শিখস্ ফর জাস্টিস’ নামে একটি সংগঠনের আইনজীবী। ওই সংগঠনটি একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান গঠনের প্রচারাভিযান চালায়। পান্নুকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে ভারত।

কী অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র?
ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার পর, পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের তথ্য তার মিত্র দেশগুলিকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত জুনে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওয়াশিংটন সফরের পরে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতকে সতর্ক করার পাশাপাশি মার্কিন সরকারি আইনজীবীরা কথিত ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নিউইয়র্ক জেলা আদালতে একটি সিলমোহর খামে মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে মার্কিন বিচার বিভাগে আলোচনা চলছে, ওই মামলাটি জনসমক্ষে আনা হবে নাকি নিজ্জারের মৃত্যু নিয়ে কানাডা যে তদন্ত চালাচ্ছে, সেটা শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এফবিআই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয় নি। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদও এ বিষয়ে কিছু বলতে চায় নি। তারা শুধু জানিয়েছে, তারা ‘আইনি বিষয়’ এবং ‘গোপনীয় কূটনৈতিক যোগাযোগ’ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করে না।

ভারতের আপত্তির পর ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে কি না বা এফবিআই হস্তক্ষেপ করে কোনও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছে কিনা তা জানায়নি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার সময় মার্কিন পক্ষ সংগঠিত অপরাধী, অবৈধ বন্দুক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাদের কাছে ভাগ করে নিয়েছে। এই তথ্য উভয় দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় এবং তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভারত তাদের দিক থেকে এই তথ্যকে গুরুত্ব-সহকারে নিয়েছে কারণ এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেও আঘাত হানছে।

এই খালিস্তানপন্থী আইনজীবী কে?
গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু একজন খালিস্তানপন্থী আমেরিকান আইনজীবী। পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে আদি বাসস্থান ছিল তার। তাকে প্রায়শই কানাডায় খালিস্তানপন্থী অনুষ্ঠান এবং বিক্ষোভে দেখা যায়। ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন তাকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল কিনা তা বলতে অস্বীকার করেছেন পান্নু।পান্নু বলেন, আমেরিকার মাটিতে আমেরিকান নাগরিকদের জন্য হুমকি আমেরিকার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং আমি নিশ্চিত যে বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম। পান্নু গত সপ্তাহে শিখদের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভ্রমণ না করার জন্য সতর্ক করেছিলেন। ওই ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সন্ত্রাস দমন এজেন্সি এনআইএ ভারতে  পান্নুর বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করেছে।

জুনে কানাডায় খুন হন খালিস্তানপন্থী নেতা নিজ্জার
চলতি বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছিলেন, নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে। ট্রুডো ওই অভিযোগ তোলার পরে ভারত আর কানাডার মধ্যে এক অভূতপূর্ব কূটনৈতিক সংঘাত শুরু হয়। কানাডার অভিযোগকে ভারত ‘ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছিল, তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রে কথিত ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের খবরে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে নতুন দিল্লি।

ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সংঘাত
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তদন্তে সহযোগিতা চেয়েছিলেন, তখন ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। ভারত কেবল এই অভিযোগই প্রত্যাখ্যান করেনি, এমন কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে যা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিল্লিতে কানাডিয়ান হাই কমিশনে কূটনীতিকদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল ভারত। কানাডায় ভারতীয় হাই কমিশনে উপস্থিত ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যার চেয়ে তাদের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছে ভারত। কানাডা ভারতের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে এবং তাদের ৪১ জন কূটনীতিককে ফিরিয়ে নিয়েছে। ভারত কানাডিয়ানদের জন্য ই-ভিসা পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছিল, যা সম্প্রতি দুই মাস পরে আবারও শুরু হয়েছে।