ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে তার মূল উপজীব্য বিষয় হলো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এবং এতে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান’ হয়েছে দাবি করে সামনে কর্মসংস্থান বাড়ানোর স্লোগান তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় যে ইশতেহার দেয়া হয়েছিলো তাতে শ্লোগান ছিলো ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’, যাতে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের বিষয়টিকে বিশেষ অঙ্গীকারের তালিকায় রাখা হয়েছিলো। তবে সেবার তরুণদের জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, দারিদ্র নির্মূল, বিদ্যুৎ জ্বালানির নিশ্চয়তার মতো বেশ কিছু বিষয়কে বিশেষ অঙ্গীকার তালিকায় রাখা হলেও এবার বিশেষ অগ্রাধিকারের শুরুতেই রাখা হয়েছে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা। একই বিশেষ তালিকায় রাখা হয়েছে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করার মতো বিষয়টি।
বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইশতেহারের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকার পরিচালনার বিশাল কর্মযজ্ঞে আমাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক। আপনাদের রায় নিয়ে তা সংশোধন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার গত প্রায় দু বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ব্যাংক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের নানা অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সাব্বির আহম্মেদ বলেছেন, এই ইশতেহার এসেছে একটি ধারাবাহিকতা থেকে যেখানে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে শিল্পোন্নত দেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
‘হুট করে কিছু আসেনি’
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সাব্বির আহম্মেদ বলছেন, ইশতেহারে ‘একেবারে হুট করে বা নতুন করে’ কিছু আসেনি। এই ইশতেহার তৈরি হয়েছে তিনটি নির্বাচনের ইশতেহারের ধারাবাহিকতায়। ফলে হুট করে নতুন কিছু আনার সুযোগ এখানে নেই এবং খুব একটা পার্থক্য আগেরটার সাথে পাওয়া যাবে না। বরং এটিকে বলা যায় মূলত ধাপে ধাপে বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি স্মারক। আওয়ামী লীগ এখন মনে করে শিল্পোন্নত হওয়ার দিকে যাত্রা শুরুর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষিত জনবল আর অবকাঠামোর যে প্রয়োজনীয়তা ছিলো সেটি অর্জন হয়েছে। সে কারণে কৃষির অগ্রগতি থাকবে, কিন্তু এখন থেকে ক্রমশ হালকা, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদে ভারী শিল্পের কথা চিন্তা করে নীতিমালা দেয়া হয়েছে।
তবে সংসদ, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, আগের ইশতেহারের চেয়ে এখানে নতুন বা পার্থক্য কিছু নেই এবং সংসদ ও দুর্নীতি-সহ অনেক ইস্যুতেই ক্ষমতাসীন দল আগের ও এবারের ইশতেহারে যা বলেছে তার সাথে বাস্তবতার মিল নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীনও বলছেন, এবারের সাথে আগের ইশতেহারের নতুন কোন পার্থক্য তারও চোখে পড়েনি। এমন কী এতে ভোটারদের জন্য আশাজাগানিয়া কিছুও আছে বলে মনে হয় না।
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নামে যে ইশতেহার দিয়েছিলো তাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা উল্লেখ করেছিলো। এরপর প্রতিটি নির্বাচনেই এই ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাকে ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে দলটি। এবার দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দেয়া ইশতেহারে দলটি ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের’ বিষয়টি তুলে ধরে বলেছে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৫, ২০৩১, ২০৪১- সময়রেখার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হয়ে তৈরি করবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত যে ব্যাখ্যা ইশতেহারে দেয়া আছে তাতে বলা হয়েছে-‘স্মার্ট বাংলাদেশের রয়েছে চারটি স্তম্ভ- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ’।
সাব্বির আহম্মেদ বলছেন, এখানে কিছু পার্থক্য এসেছে কারণ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজ শুরু করে একটা পর্যায়ে দেশকে নিয়ে এসেছে। অনেক উদ্যোগের ফলে একটি স্মার্ট সমাজের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। সে কারণেই এবার স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান এসেছে।
প্রসঙ্গ : গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ
২০১৮ সালের ইশতেহারে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার ছিল ’গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে উর্ধ্বে তুলে ধরা হবে এবং সংবিধান হবে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দলিল’। এবারের ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে ‘নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ এবং এটি কোনভাবেই সরকারের মুখাপেক্ষী নয়। এছাড়া আওয়ামী লীগে সরকারের গত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদেই সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো’। একই সাথে এই ইশতেহারে অঙ্গীকার করা হয়েছে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা সুপ্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী করে তোলা হবে’।
ড. ইফতেখারুজ্জামান কিন্তু বলছেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও মুখাপেক্ষী নয় – বরং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই কমিশন ভূমিকা পালন করেছে এবং সেটিই বরং দৃশ্যমান। দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসির রূপকল্পে ছিলো সব দলের আস্থা অর্জন করা ও সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটা কতটা করতে পেরেছে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। এটি সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে তা বলা কঠিন।
কার্যকর সংসদ নিয়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির হাতে যেভাবে সংসদের কার্যকারিতা জিম্মি ছিলো, তার স্থলে অর্থবহ বিরোধী দল-হীন সংসদীয় চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে, যা দৃশ্যমান ভবিষ্যতে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে সংসদ হয়তো ঠিকই সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হবে, তবে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের যে মৌলিক ভূমিকা সংসদের, তা পালনের প্রত্যাশার কোনও যৌক্তিক ভিত্তি থাকবে, এমন ভাবা কঠিন। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ইশতেহারের মতো এবারের ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতির কথা উল্লেখ করেছে আওয়ামী লীগ। যদিও গত কয়েক বছরে বারবার আলোচনায় এসেছে দুর্নীতির নানা খবর এবং এসব বিষয়ে সরকার কতটা শক্ত অবস্থা নিতে পেরেছে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকার ছিলো কাগজে কলমে। কিন্তু বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকেই গেছে। বরং এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কাজ যাদের ছিলো অনেক ক্ষেত্রেই তারা দুর্নীতির সুরক্ষা দিয়েছে।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার
২০১৮ সালের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ সুবিধা অবারিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোন প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
এবারের ইশতেহারে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সরকারের অর্জন সম্পর্কে যে সব কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে আওয়ামী লীগ আইনের শাসনের নীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মানবাধিকার সংস্থা কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে আসছে। যেমন এই সরকারের আমলেই ২০২১ সালে মানবাধিকার ইস্যুতেই র্যাব ও বিভিন্ন সময়ে ওই সংস্থায় ছিলেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
অবশ্য ইশতেহারে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ বলেছে, দেশি-বিদেশী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা প্রচারণা করে আসছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে প্রচারণা বা ‘মিস রিপ্রেজেন্টেশন’ রয়েছে সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হবে। একই সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোন চেষ্টা প্রতিহত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত, সংবিধানকে সমুন্নত রেখে মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার কথা আবারো উল্লেখ করেছে তারা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বড় অভিযোগ হলো সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে এবং বিরোধী মত দমনে ‘নিষ্ঠুরতা’র পরিচয় দিয়ে আসছে। যদিও সরকার এসব অভিযোগ সবসময়ই প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিক হত্যার বিচার ত্বরান্বিত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পদক্ষেপ নিয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন, তাদের প্রতি ভয়ভীতি-হুমকি প্রদর্শন এবং মিথ্যা মামলা রোধ করা হবে।
যদিও বাস্তবতা হল, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২৩ এ বলা হয়েছে, গত দুই বছরে বাংলাদেশ (গণমাধ্যম সূচকে) ১১ ধাপ ও ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নিচে নেমেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে শুধু গত বছরেই (২০২২ সালে) সারাদেশে ২২৬টি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে সমালোচনা ও বিরোধী মত দমনের চেষ্টা করা। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে ওই আইনে কিছুটা সংশোধনীও আনতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
তবে এবারের ইশতেহারে দলটি বলেছে, নতুন প্রণীত আইন ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’ অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এবং অপব্যবহার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন
২০১৮ সালের ইশতেহারে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দেয়া নানা সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছিলো যে সরকার দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রাখবে। এবার এর সঙ্গে ‘দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সব ধরণের হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান রাখা এবং নতুন বেতন কাঠামোর অঙ্গীকার’ যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের মতো এবারেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
অর্থনীতি
২০১৮ সালের ইশতেহারে বলা হয়েছিলো ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। একইসাথে তখন বলা হয়েছিলো যে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারের বেশি।কিন্তু এবারের ইশতেহারে দেয়া তথ্য অনুযায়ী এখন মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। সুতরাং আগামী সাত বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় প্রায় দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার আছে সরকারি দলের। অন্যদিকে বাস্তবতা হলো গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রিজার্ভ ৪৮বিলিয়ন ডলার থেকে কমতে কমতে এখন ১৯ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। সংকটে পড়েছে দেশের ব্যাংকগুলো। অথচ এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়েই আওয়ামী লীগ এবারের ইশতেহারে ২০৩০ সাল নাগাদ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ বিলিয়ন ডলার ঠিক করেছে, যা এখন ৫০ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে।
এবারের ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ফলে দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখী হবে এবং সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এর বাইরেও কৃষি, বিদ্যুৎ জ্বালানি, যোগাযোগ, শিল্প উন্নয়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে ২০১৮ সালের ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি বর্ণনা করে এবার নতুন ইশতেহারে সেগুলোকে আরও এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
অগ্রাধিকারে পার্থক্য কতটা?
ইশতেহার ২০২৪- যে ১১ বিষয়ে অগ্রাধিকার : দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ, সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামো বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ, সর্বজনীন পেনশনে সকলকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
ইশতেহার ২০১৮- যে বিষয়ে বিশেষ অঙ্গীকার ছিলো : আমার গ্রাম-আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, নারীর ক্ষমতায়ন, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দৃঢ় করা, দারিদ্র নির্মূল, সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাড়ানো, স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা, দক্ষ ও সেবামূখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু ইকনোমি, নিরাপদ সড়ক, প্রবীণ প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন- সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
সূত্র : বিবিসি বাংলা