ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা দেড় মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার স্কুল, মসজিদ এমনকি হাসপাতালের মতো স্থাপনাও। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনপ্রণেতারা। একইসঙ্গে রাজধানী প্রিটোরিয়ায় ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধ তরে দেওয়ার পক্ষেও ভোট দিয়েছেন তারা।
বুধবার (২২ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় প্রিটোরিয়ায় ইসরায়েলের দূতাবাস বন্ধ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্ট। পদক্ষেপটি মূলত প্রতীকী। এছাড়া পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে গৃহীত এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে কিনা তা প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
আল জাজিরা বলছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত রাজধানী প্রিটোরিয়ায় ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে আনা এই প্রস্তাবটি মঙ্গলবার পাস হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে প্রস্তাবটির পক্ষে ২৪৮ ভোট এবং বিপক্ষে ৯১টি ভোট পড়ে। ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস সমর্থিত বামপন্থি বিরোধী দল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপনের এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করে। আর মধ্যপন্থি, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ, মূলত ইসরায়েলপন্থি গণতান্ত্রিক জোটের সদস্যরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।
প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা করছে বলে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বাস করে।
মূলত ইসরায়েল প্রিটোরিয়া থেকে রাষ্ট্রদূত এলি বেলোটসারকভস্কিকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মঙ্গলবার এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে ইসরায়েলে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও রাষ্ট্রদূত নেই এবং দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান বিষয়টিকে সমর্থন করে এসেছে। এদিকে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকস দেশগুলোর একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনও আয়োজন করেছে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত উদীয়মান অর্থনীতির এই গোষ্ঠীটি গাজায় ‘অবিলম্বে, স্থায়ী এবং টেকসই মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছে’।
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে রামাফোসা বলেন, ‘স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে আমরা গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আসুন আমরা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের জনগণের জন্য একটি ন্যায্য, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করি।’
মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার সমর্থক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। এমনকি গাজায় আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কাছে আহ্বানও জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়া গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা তদন্ত করতে বাংলাদেশ, বলিভিয়া, কোমোরোস এবং জিবুতিসহ দক্ষিণ আফ্রিকা সম্প্রতি আইসিসির কাছে একটি আবেদনও জমা দিয়েছে।