সারাদেশ

‘লোক ভাড়া’ করে বাদশার প্রচারণা, ওয়ার্কার্স পার্টি বললো- বাজে কথা’

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ১২:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা পেয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। কিন্তু নৌকার পাশে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রচারণায় গিয়ে কর্মী সংকটে পড়েছেন এ আসানের টানা তিনবারের এমপি ও নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা।

ভোটের মাঠে এখন ফজলে হোসেন বাদশার প্রচারণার জন্য ভাড়ায় মিছিলে যাওয়া নারীদের ডাকতে হচ্ছে। রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে নগরীর তালাইমারী শহিদ মিনার এলাকা থেকে নৌকার পক্ষে বের করা মিছিলে অংশ নেওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। ওয়ার্কার্স পার্টির স্থানীয় এক নেতার কাছে এক নারীকে মিছিল শেষে টাকা চাইতে দেখা গেছে। তবে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে নারীদের এনে মিছিল করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

নগরীর তালাইমারী থেকে বের করা মিছিল পঞ্চবটি হয়ে আলুপট্টি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। নারীদের এ মিছিলের শুধু সামনের অংশে ওয়ার্কার্স পার্টির কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন। আর ছিলেন নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। মিছিলের সামনে থেকে তিনি ভোটারদের হাতে লিফলেট তুলে দেন। পরে আলুপট্টি মোড়ে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। সেখানে ফজলে হোসেন বাদশা বক্তব্য দেন।

আলুপট্টি মোড়ে কথা হয় মিছিলে মর্জিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ১০ দিন মিছিলে গেলে এক হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে। তাই তিনি মিছিলে এসেছেন। মর্জিনার পাশে থাকা আরও এক নারী এ কথার সত্যতা স্বীকার করেন। এ টাকা কে দেবে জানতে চাইলে মর্জিনা বেগম পাশে থাকা শিউলি খাতুনকে দেখিয়ে বলেন, সে আমাদের এনেছে। টাকা সে দিবে। পাশে থাকা আরেক নারী এসে মর্জিনা বেগমকে বকাঝকা করেন টাকার বিনিময়ে মিছিলে আসার কথা বলে দেওয়ার কারণে।

কথা হয় নগরীর হাদির মোড়ের বাসিন্দা গোলাপী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি ২০ নারীকে এনেছেন। তার সঙ্গেও কথা হয়েছে যে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ির কাজ শেষ করে তারা মিছিলে অংশ নেবেন। যে কয়জন নারীকে আনা হবে, তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। আগের দিন শনিবারও তারা মিছিলে অংশ নেন। তবে টাকা পাননি। শুধু চা খাওয়ার জন্য ২০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন গোলাপী বেগমের।

মিছিল শুরুর আগেই তালাইমারী শহিদ মিনারের সামনে এসে বসেছিলেন বেশকিছু নারী। কথা বলে জানা গেল, এই নারীদের এনেছেন মিলা খাতুন নামের একজন। মিলাকেও পাওয়া যায় সেখানে। মিলা জানান, ছাত্রমৈত্রীর নেতা সম্রাট রায়হান তাকে নারীদের আনতে বলেছেন। যাতায়াতের খরচ হিসেবে সবাইকেই কিছু টাকা দেওয়া হবে। তিনি ৪০ জন নারীকে এনেছেন।

মিছিলে নারীদের টাকা দিয়ে নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু বলেন, এটা বাজে কথা। আমরা কাউকে টাকা দিয়ে মিছিলে আনি না।

ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওয়ার্কার্স পার্টির সহযোগী সংগঠন নারী মুক্তি সংসদের ৩০০ জন করে নারীর তালিকা করা হয়েছে। তারাই মিছিলে আসছে। কাউকে টাকা দিয়ে আনা হয় না।

ওই মিছিল শেষে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আজকে যে মিছিল হল, এ মিছিলে অনেক সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিয়ে গঠিত এ আসনে ফজলে হোসেন বাদশা ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনবার জোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হয়েছেন। এবারও তিনি নৌকা পেয়েছেন। তবে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি হয়েই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এবার তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জোর দাবি উঠেছিল।

জোটের রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা পেলেও এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। তার প্রতীক কাঁচি। গত শুক্রবার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ একটি সভা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে থাকার অঙ্গীকার করেছে। নেতাকর্মীদেরও সবাইকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে।


সূত্র : জাগো নিউজ