হামাসের হাতে আটকে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে চার দিনের যুক্তবিরতির একটি চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছেন ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের ছয় সপ্তাহের মাথায় এসে হামাসের সাথে এই জিম্মি চুক্তি হলো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে আগামী চার দিনের মধ্যে ৫০ জন জিম্মি মুক্তি পাবে এবং এ সময়টিতে লড়াই স্থগিত থাকবে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এরপর অতিরিক্ত প্রতি দশজন জিম্মির মুক্তির জন্য এক দিন করে যুদ্ধবিরতি বাড়বে। তবে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে নিমূর্ল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযান চলবে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে হামাস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৫০ জিম্মিকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে ওই চুক্তির অংশ হিসাবে মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে শতাধিক ট্রাককে গাজায় প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া হবে বলে হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে, ৫০ জনের বেশি জিম্মি মুক্তি পেতে পারে। জিম্মিদের মধ্যে তিনজন মার্কিন নাগরিক মুক্তি পেতে পারেন, যাদের মধ্যে তিন বছরের একটি শিশুও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালালে অন্তত বারশো মানুষ মারা যায় এবং দুশোরও বেশি মানুষকে হামাস জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপর ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করে এবং হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এ পর্যন্ত মারা গেছে, যাদের মধ্যে পাঁচ হাজার শিশু রয়েছে।
চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েল যা বলছে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটির সরকার সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। সরকার লক্ষ্য অর্জনের একটি রূপরেখা অনুমোদন করেছে এবং সে অনুযায়ী নারী ও শিশুদের সমন্বয়ে কমপক্ষে ৫০ জিম্মি আগামী চার দিনে মুক্তি পাবে। এ সময়ে যুদ্ধে বিরতি দেয়া হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত প্রতি দশ জন জিম্মির মুক্তির জন্য এক দিন করে যুদ্ধবিরতি থাকবে। ইসরায়েল সরকার, আইডিএফ (ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী)এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সব জিম্মিদের মুক্ত করতে, হামাসকে নির্মূল করতে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রতি নতুন কোন হুমকি আসবে না নিশ্চিত করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
চুক্তির বিষয়ে হামাস যা বলছে
ইসরায়েলের পর ওই চুক্তির বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে হামাস। সেখানে তারা বলেছে, ৫০ জিম্মিকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে ওই চুক্তির অংশ হিসাবে মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে শতাধিক ট্রাককে গাজায় প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া হবে বলে হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার সময় গাজা ভূখণ্ডে কোন হামলা বা গ্রেফতার করবে না ইসরায়েলি বাহিনী।
তিন বছর বয়সী মার্কিন জিম্মি
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছেন যে হামাসের হাতে জিম্মি হয়ে আছে এমন অন্তত তিনজন মার্কিন নাগরিক আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মুক্তি পাবে। এর মধ্যে তিন বছর বয়সী একটি শিশুও আছে। ওই শিশুর বাবা মা সাতই অক্টোবরের হামলায় মারা গেছে।আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এসব জিম্মিরা মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নারী জিম্মির মৃত্যুর ঘোষণা
প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা একজন নারী ইসরায়েলি জিম্মির মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে। তারা অবশ্য ওই জিম্মির পরিচয় কিংবা তিনি কিভাবে মারা গেলেন সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি। ইসরায়েলের তরফ থেকেও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য আসেনি।
জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনা দায়িত্ব
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ড্যানিয়েলে হ্যাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনা। আমরা জানবো কিভাবে আমাদের অভিযানের অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে এবং যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বহু ধাপে এটি হবে একটি প্রলম্বিত যুদ্ধ। এর আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো সমঝোতা চুক্তি হলেও ইসরায়েলের যুদ্ধ প্রচেষ্টার অবসান হবে না।
মঙ্গলবার যা যা ঘটলো
ইসরায়েলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন হামাস ৫০ জন জিম্মির মুক্তি দিবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েলের বন্দী থাকা ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জিম্মি নিয়ে সমঝোতা হলেও যুদ্ধ চলবে। তিনি সমঝোতা চুক্তির অগ্রগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ওদিকে গাজায় লড়াই অব্যাহত আছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইসরায়েলের অভিযানে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০০টি শিশু।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, গাজার উত্তরে একটি হাসপাতালে হামলায় তিনজন চিকিৎসক মারা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে সংস্থাটির একজন কর্মী ও তার পরিবারের সদস্য হামলায় নিহত হয়েছে।
লেবাননের একটি টেলিভিশন জানিয়েছে, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তাদের দুজন সাংবাদিক নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার উত্তরে জাবালিয়া শহর ঘিরে ফেলেছে এবং তারা ‘দ্বিতীয় ধাপের জন্য’ এখন প্রস্তুত।
সূত্র : বিবিসি বাংলা