নির্বাচন

এখনও কি নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে?

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী ঘোষণা, মনোনয়পত্র জমা, যাচাই-বাছাইসহ নানা তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে ভোট আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু এতোকিছুর মধ্যেও বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল- বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো অংশ না নেওয়ায় যথা সময়ে নির্বাচন হওয়া নিয়ে সাধারণ ভোটারদের অনেকের মধ্যেই এক ধরনের সংশয় যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমন অনেক ধরনের প্রশ্নও ঘুরছে মুখে মুখে। সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গুগল সার্চের তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঠকরা যেসব প্রশ্ন বেশি করছেন, সেগুলোর জবাব খোঁজার চেষ্টা করছে।

বিএনপি চাইলে কি এখন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে?
নির্বাচনের আর মাত্র একমাস বাকি আছে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটসহ প্রায় ত্রিশটি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো। কিন্তু এখন যদি তারা মত পরিবর্তন করে নির্বাচনে আসতে চায়, তাহলে কি অংশ নিতে পারবে?- এমন প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে ভোটারদের অনেকের মুখে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৩০শে নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ দিন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষদিন অতিক্রান্ত হবার পর তফসিল পেছানোর কোনো নজির নেই।

এর আগে যতবার তফসিল পেছানো হয়েছে, সেটি ঘটেছে মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে। ফলে নির্ধারিত সময়ে মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় বিএনপি এখন চাইলেও আর নির্বাচনে নিতে পারবে না বলে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আইনত সেই সুযোগ ছিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন, অর্থাৎ গত ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত। নির্বাচনের এই পর্যায়ে এসে এখন তাদের অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার আইনগত আর কোন সুযোগ নেই। তাতে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদপূর্তির আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশে অতীতের নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সাধারণত ৪৫ দিন পর্যাপ্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের তারিখ পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ সময় বেশি রাখা হয়েছে।

অনেকে মনে করছিলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই একটু বাড়তি সময় রাখা হয়েছে যেন শেষ মুহূর্তে তারা নির্বাচনে আসতে চাইলে তফসিল পেছানো যায়। কিন্তু সেই সুযোগ পেতে হলে মনোনয়নপত্র জমা শেষ হওয়ায় আগেই দলটিকে নির্বাচনে আসতে হতো।

এ বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাস অনুসরণ করলে দেখা যাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে তফসিল পেছানো হয় না। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে এখনও তফসিল বাতিল করতে পারে। মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিন অতিক্রান্ত হবার পরেও নির্বাচন কমিশন চাইলে সময় বৃদ্ধি করতে পারে। কমিশনের সে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আছে। কারণ, এখানে আইনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে সেটা করা যাবে না।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিলে ইতিমধ্যেই যেসব দল বা প্রার্থীরা নির্বাচনে এসেছেন, তারা চাইলে কমিশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই তারা এই ঝামেলায় পড়তে চায় না। নির্বাচন কমিশন আইনী জটিলতায় কেন পড়বে? কেন মামলার জালে পড়বে? বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান।

নির্বাচন পেছানোর কি সুযোগ আছে?
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আইনত এখন আর নির্বাচন পেছানোর কোন সুযোগ নেই। যে কারণে বিএনপিকে এখন আর নির্বাচনে আনা সম্ভব নয়, সেই একই কারণে নির্বাচন পেছানোরও সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপে অবস্থান করছে। এখন যদি নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে নতুন করে বিএনপি বা অন্য কোন দলকে সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে যে দলগুলো এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছেন, তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।

যদিও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোন লক্ষণই এখন পর্যন্ত বিএনপির মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে দলটি। ফলে নির্বাচনের তফসিল পেছানো হবে কি-না, সেটি নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা। নির্বাচনের তফসিল পেছালেই ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থা’ দূর হবে না বলে মনে করেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এসব কিছু পরিবর্তন আনবার জন্যে যে প্রক্রিয়া অপরিহার্য তা হলো একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের জন্যে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। কেবল মনোনয়ন জমা দেয়ার তারিখ পরিবর্তন করলেই তা অর্জিত হয়ে যাবে না।

এবারও জাতীয় পার্টি কি সমঝোতার নির্বাচন করবে?
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। এর মাধ্যমে তারা ২০১৪ সালে ২৯টি এবং ২০১৮ সালে ২২টি আসনে জয়ীও হয়েছিল। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টি আসন। দলটি কি এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে জোট বেঁধে নির্বাচন করবে?- এমন প্রশ্ন করছেন ভোটারদের অনেকে। জোট করে নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্য ভোটারদেরকে আরো আগ্রহী করে তুলেছে।

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ দলের শরিকদের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত হবে। বুধবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজকে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এখানে জোট বা আসন ভাগাভাগির কোন বিষয় নেই। আমরা এবার কোন জোট-মহাজোটে যাবো না। নিজেদের শক্তিতে লাঙ্গল প্রতীকেই নির্বাচন করবো। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা নিজ শক্তিতেই নির্বাচন করবো। তবে নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য আমাদের একটা নির্বাচনী কৌশল আছে। তবে এর বাইরেও সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশলই বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ২৯৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ২২ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তারা সবাই আপিল আবেদন করছেন বলে জানিয়েছে দলটি। নিজেদের শক্তিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও জাতীয় পার্টি বলছে, নির্বাচনের জয়লাভ করতে সব ধরনের কৌশলীই মাথায় রাখছেন তারা।

কিংস পার্টি কারা?
এবারের নির্বাচনে কিংস পার্টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ‘কিংস পার্টি’ একটি পশ্চিমা ধারণা। অতীতে রাজা বা শাসকরা নিজেদের প্রয়োজনে যে দল তৈরি করতেন, তাকে বলা হতো কিংস পার্টি। মূলত: ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব দল তৈরি করা হয়, যাদের উদ্দেশ্যই থাকে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের স্বার্থ রক্ষা করা। বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন সময় রাজনীতির মাঠে এ ধরনের দল দেখা গেলেও তা ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিতি পায় ২০০৭ সালে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন বলেন, আমরা দেখেছি সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড একভাবে নিষিদ্ধ ছিল, তখন তাদেরই আগ্রহে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে কয়েকটি দল জন্ম নিয়েছিল। এসব দলের মধ্যে ছিল প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়েও দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চাওয়ার কারণে বেশকিছু নতুন দলের জন্ম হয়েছে এবং রাজনীতির মাঠে তাদেরকে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

এরপর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে একটি দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা নিবন্ধন পেয়েছে বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল। একই আলোচনা রয়েছে, ২০২৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টিকে নিয়েও। সাংগঠনিক কাঠামো কিংবা সারা বছর কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকলেও মূলত: নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে দেন-দরকার বা হঠাৎ সক্রিয় তৎপরতা থেকেই দলগুলো ‘কিংস পার্টি’র তকমা পাচ্ছে।

তবে বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখানে কিংস পার্টির কী আছে! আমরা কি রাজতন্ত্র চালাচ্ছি বাংলাদেশে? কিংস পার্টি আসবে কোত্থেকে? আমরা কি অস্বাভাবিক সরকার, ওয়ান-ইলেভেনের যে এখানে কিংস পার্টি আসবে! আমরা গণতন্ত্র নিয়ে লড়াই করছি। সংবিধান রক্ষা, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচন আমরা করতে চাই।’

যেসব দলকে কিংস পার্টি বলে অভিহিত করা হচ্ছে, সেই দলগুলোও নিজেরা নিজেদেরকে ‘কিংস পার্টি’ মনে করছে না। নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকারকে সমর্থন করার জন্য, বিশেষ করে যেখানে বড় একটি দল এবং তাদের অনুসারি বা অনুযোগীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, সেখানে নির্বাচনকে আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য এই ধরনের দলের আর্বিভাব ঘটেছে।

ডামি প্রার্থী কী?
এবারের নির্বাচনে বহুল আলোচিত আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ডামি বা বিকল্প প্রার্থী। একটা সময় পর্যন্ত ঋণখেলাপি বা শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য মূল প্রার্থী নিজে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তিনি এমন কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী করতেন, যাতে ক্ষমতা নিজেদের হাতেই থাকে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। চলতি বছরের মধ্যভাগ থেকেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার তাগিদ দিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পশ্চিমা অনেক দেশ। কিন্তু নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকা বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো এবারের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট দেখানোটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা মনোনয়ন চেয়েও পাননি, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় দলটি। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসা যাবে না। প্রয়োজন হলে ডামি প্রার্থী রাখতেও বলা হয়েছে। আগে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হলে ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্তু এবার স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হলেও তারা মূলত আওয়ামী লীগের ঘরের লোক হিসাবেই থাকছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আর ডামি প্রার্থী এক নন। ডামি প্রার্থী ও স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী এক নয়। প্রধানমন্ত্রী যে ডামি প্রার্থী রাখতে বলেছেন সেটা সব জায়গায় নয়। যেসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়ন জমা নাও দিতে পারেন, এমনটি মনে হলে সংশ্লিষ্ট আসনের নৌকার প্রার্থী নিজ দলে কাউকে প্রার্থী মনোনীত করবেন। এমনটাই বোঝানো হয়েছে।

তবে ডামি প্রার্থী একটি দলের ভেতর থেকেও যেমন হতে পারে, তেমনি তাদের সহযোগী দলের মধ্য থেকেও আসতে পারে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ডামি প্রার্থী সাধারণ করা হয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য। অর্থাৎ যদি একটি আসনে পাঁচজন প্রার্থী থাকে, সেখানে দেখা যাবে একজন মূল প্রার্থী, বাকিরা তার সাপোর্টিং প্রার্থী।

বিএনপিসহ অনেক দল অংশ না নেওয়ায় ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দলটি। এবারের নির্বাচনে যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতেই দলটি নতুন এই কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এবার লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একেবারে ক্ষমতাসীন দল থেকেই বলা হচ্ছে ডামি প্রার্থী দিতে হবে সব জায়গায়। এটা করা হয়েছে যাতে এবার প্রার্থীরা কোন আসনেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হয়।

তবে স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নির্বাচনের মাঠে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন। তিনি বলেন, এই প্রার্থীরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ছায়াপ্রার্থী। তবে এসব ছায়াপ্রার্থীরা সব সময় দলের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে, এমনটা আশা করা ঠিক হবে না। নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, বিভিন্ন আসনে ছায়াপ্রার্থী এবং দলের মনোনিত প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতা এবং সংঘর্ষ শুরুও হয়ে গেছে।

এর আগে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশল নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য সুযোগ দেয়া বা ডামি প্রার্থী দাঁড় করানোকে দলটির নির্বাচনী নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর নতুন এই কৌশল অবলম্বন করে দলটি কতদূর যেতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।