বলিউড সিনেমায় অভিষেক ঘটতে চলেছে ৫ বার বাংলাদেশের জাতীয় পুরষ্কার জয়ী অভিনেত্রী জয়া আহসানের। চলচ্চিত্রের নাম কড়ক সিং। যার প্রথম পোস্টার প্রকাশিত হয় ৯ নভেম্বর। তবে কোনো প্রেক্ষাগৃহে নয়, ছবিটি শিগগিরই মুক্তি পেতে চলেছে ভারতের ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভে। ২০২২-এর শেষের দিকে প্রজেক্টটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দুই বাংলার এই জনপ্রিয় তারকা। শুটিং ও নির্মাণের যাবতীয় কাজ শেষে ফার্স্ট লুক পোস্টারের মাধ্যমে তার হিন্দি সিনেমার ব্যাপারটি চূড়ান্ত হলো। শুধু ক্যারিয়ারের একটি নতুন অধ্যায়ই নয়; এর মাধ্যমে ভারতের প্রতিভাবান সব চলচ্চিত্র কর্মীদের সাহচর্য পেলেন চির তরুণ এই অভিনেত্রী। চলুন, জয়ার এই নতুন যাত্রার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কড়ক সিং নির্মাণের নেপথ্যের মানুষেরা
এই মুভির মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো হিন্দি ভাষায় নির্দেশনা দিলেন ভারতের বাঙালি নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি অনুরণন (২০০৬) দিয়েই তিনি দর্শকদের কাছে নিজের একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করেছিলেন। অনুরণনসহ অন্তহীন (২০০৮) এবং পিঙ্ক (২০১৬ ফিল্ম) তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এনে দেয়। কড়ক সিং-এর কাস্টিং পরিচালনার কাজ করেছেন যোগী মল্লং, যিনি পূর্বে অস্কার জয়ী আরআরআর মুভির কাস্টিং ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি নিজেও ছবির একটি ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তার সঙ্গে কাস্টিংয়ে সহপরিচালক হিসেবে রয়েছেন অভিষেক বাগচী। প্রোডাকশন ডিজাইনের দায়িত্বে ছিলেন নাতাশা গৌউবা, যিনি এর আগে সালমান খানের রেস-৩ (২০১৮) ও দীপিকার রামলীলা (২০১৩) এর প্রোডাকশন ডিজাইন করেছিলেন। সঙ্গীত আয়োজন করেছেন ভারতের খ্যাতিমান সুরকার, গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র। চিত্রগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন অভিক মুখোপাধ্যায়, যিনি অনিরুদ্ধর পিঙ্ক মুভির সিনেমাটোগ্রাফি করেছিলেন। ছবির সামগ্রিক সম্পাদনায় নিয়োজিত ছিলেন অর্ঘকমল মিত্র।
কড়ক সিংয়ে জয়ার সহ অভিনয় শিল্পীরা
ছবির নাম ভূমিকায় এখানে দেখা যাবে বলিউড অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। যদিও চলচ্চিত্রের ভাষা বাংলা নয়; কিন্তু একজন বাঙালি পরিচালকের সঙ্গে এ নিয়ে পঙ্কজ তৃতীয়বারের মতো কাজ করলেন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে ‘দিল বেচারা'(২০২০) খ্যাত অভিনেত্রী সঞ্জনা সাংঘী, এবং মালায়ালাম অভিনেত্রী পার্বতী থিরুভোথু। এছাড়াও রয়েছেন দিলীপ শঙ্কর, পরেশ পাহুজা, বরুণ বুদ্ধদেব সহ আরও অনেকে।
কড়ক সিংয়ের চিত্রনাট্য
রহস্য ঘেরা পটভূমি; পরতে পরতে রোমাঞ্চ নিয়ে কড়ক সিং একটি অর্থ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিকে ঘিরে আবর্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র শ্রীবাস্তব একজন অ্যামনেশিয়ার রোগী, যার অতীতের কোনো কিছুই মনে নেই। কিন্তু যে করেই হোক তাকে নিজের বিস্মৃতিতে হারিয়ে যাওয়া এক ঘটনাকে বের করে আনতে হবে। কাহিনীর চূড়ান্ত মুহুর্তে উদ্ঘাটিত হয়ে পড়ে বিরাট এক অপকর্মের রহস্য। সাসপেন্সে ভরপুর প্রেক্ষাপট ছাড়াও অনিরুদ্ধ রায়, ভিরাফ সরকারী, ও রিতেশ শাহের লেখনীতে উঠে এসেছে বাবা-মেয়ের গল্প। এই গল্পকে চিত্রনাট্যে রূপ দিয়ে রিতেশ শাহ দেখিয়েছেন চরম সংকটের মুখে সংগ্রাম মুখর এক পরিবারের কাহিনী।
দেশের গন্ডি পেরিয়ে জয়ার বলিউড যাত্রা
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলরে (২০০৪) অতিথি শিল্পী হিসেবে ছোট্ট একটি ভূমিকা। আর সেই থেকে শুরু জয়া আহসানের বড় পর্দায় পথচলা। ২০১৩ সালে ‘আবর্ত’ প্রবেশ করেন ভারতীয় বাংলা মুভিতে। সেই থেকে বেড়ে চলেছে টলিউডে জয়ার জনপ্রিয়তা, যার ফসল ৩ বার ভারতের ফিল্মফেয়ার বাংলা পুরষ্কার। তার অভিনীত সবশেষ কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘অর্ধাঙ্গিনী’ এবং সৃজিত মুখার্জির ‘দশম অবতার’ দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে বক্স অফিস। আর এবার হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের অভিনয়শৈলীর এক তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলকে পৌঁছালেন জয়া।
জয়ার প্রথম হিন্দি সিনেমা পর্যন্ত যাত্রা পথ কতটা দীর্ঘ ছিল তা বলাই বাহুল্য। ১৯৯৭ সালের সেই কোকাকোলার বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে টিভি নাটক। এরপর থেকে পুরো অভিনয় জীবনে নিজেকে বহুবার ভেঙে চুড়ে নতুন করে গড়েছেন এই অভিনেত্রী। নিজের একটি ভিন্ন ঘরানার দর্শক থাকলেও সুপার হিট তারকাতূল্য সাফল্যের পরশ পেতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দুই দশকেরও বেশি সময়। আর সেই পরিশ্রম ও ধৈর্য্যের প্রতিদানেই এখন ক্যারিয়ারের সব থেকে স্বর্ণ সময়টি পার করছেন জয়া।