আন্তর্জাতিক

গাজা থেকে আরো ১২ জিম্মি, ৩০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি


Deprecated: Function get_the_author_ID is deprecated since version 2.8.0! Use get_the_author_meta('ID') instead. in /home/bkotha24/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ১২:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৩

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস তাদের আরো ১২ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং মুক্তির পর তারা গাজা ছেড়ে ইসরায়েলে এসে পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে দুইজন থাই নাগরিক আছেন। অন্যদিকে, দেশটির কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ইসরায়েল থেকেও ৩০জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর আগে আরো দেড়শো ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন যাদের বেশিরভাগই কিশোর ও নারী। উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি ৪৮ ঘণ্টা বাড়াতে একমত হওয়ার পর মঙ্গলবার ছিলো হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাময়িক যুদ্ধবিরতির পঞ্চম দিন। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এ পর্যন্ত গাজা থেকে মোট ৮১ জন জিম্মি মুক্তি পেয়ে ইসরায়েলে ফেরত গেছেন, এর মধ্যে ৬১ জন ইসরায়েলের নাগরিক এবং তারা সবাই নারী ও শিশু। হামাসের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে যেসব বর্ণনা পাওয়া গেছে তাতে তাদের কোন ভূগর্ভস্থ জনবহুল জায়গায় রাখা হয়েছিলো, প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার এবং বিছানা হিসেবে ব্যবহারের জন্য বেঞ্চ দেয়া হয়েছিলো বলে জানা যায়। ওদিকে চুক্তির আওতায় যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল তাদের বিরুদ্ধে আগে পাথর ছোঁড়া থেকে শুরু করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পর্যন্ত আনা হয়েছিলো।

যুদ্ধবিরতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা
মঙ্গলবার ছিলো ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পঞ্চম দিন। এ কয়দিনে তারা পরস্পরের মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় করেছে।ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চলমান জিম্মি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি আরো পাঁচদিন বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গাজার অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনের সন্ধানের জন্য এ যুদ্ধবিরতির সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। হামাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ গাজায় এখনো নিখোঁজ আছে এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে মারা গেছেন ১৪ হাজার ৫০০ জন। হামাস সীমান্ত অতিক্রম করে গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় এবং তাতে ১২শর মতো মানুষ মারা যায়। একই সাথে তখন ২৪০ জনকে জিম্মি করে হামাস। জেরুসালেম থেকে বিবিসির ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট পল এডামস জানিয়েছেন আরো একটি ৪৮-ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার বাহিনী গাজায় ‘পূর্ণ শক্তি’ নিয়েই অভিযান অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছে।

গাজায় রান্নার গ্যাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা
গাজার দেইর আল বালাহ থেকে বিবিসির আদনান এল বুরশ জানিয়েছেন, দেইর আল বালাহ মূলত মধ্য গাজার একটি শহর। উত্তরাঞ্চলের বিপর্যস্ত পরিস্থিতির তুলনায় এ শহরটি তুলনামূলক নিরাপদ। কিন্তু সেখানেও শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রান্নার গ্যাসের জন্য। খাবার গরম করার জন্য গ্যাস পাবার অপেক্ষায় অনেকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেই রাস্তা ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ তিনদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ সিলিন্ডারের ওপরেই বসে আছেন। গ্যাসের জন্য এমন অপেক্ষায় থাকা মধ্যবয়সী একজন নারী ক্ষোভ নিয়ে বললেন, “কোথায় সব আরব আর মুসলিমরা। কোথায় মানবাধিকারের সব রক্ষকরা? তোমরা ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে গেছো যাতে তারা দুর্ভোগে পড়ে, ক্ষুধায় কষ্ট পায় এবং ধ্বংস হয়ে যায়”। তার চোখেমুখে ক্ষোভ আর হতাশার ছাপ ছিলো স্পষ্ট। “সকাল থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে অপেক্ষা করছি। এখানে দাঁড়িয়েই ভোরের নামাজ পড়েছি”। তিনি উত্তরাঞ্চলের বেইত হানৌন থেকে বাস্তুচ্যূত হয়ে এই এলাকায় এসেছেন। এখন দেইর আল বালাহ এলাকায় জাতিসংঘের একটি স্কুলে পরিবারসহ বাস করছেন তিনি।

৭০ বছর বয়সী আরো এক নারীর মুক্তি লাভ
টামি মেজগারের বয়স ৭৮ বছর। তিনি তার ৮০ বছর বয়সী স্বামী ইয়োরামসহ অপহৃত হয়েছিলেন নির ওয এলাকা থেকে। তার স্বামী এখনো হামাসের হাতেই আটক আছেন, যিনি ডায়াবেটিস রোগী এবং মাত্র ছয় মাস আগেই তার নিতম্বের হাড় ভেঙ্গেছে বলে জানিয়েছেন তার পুত্রবধূ। জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবারগুলোর ফোরাম জানিয়েছে, মেজগার মূলত নাতি নাতনিদের দেখভাল করেই সময়কে উপভোগ করে থাকেন। তিনি হাঁটাচলা কমই করেন। বেশিরভাগ সময় সংবাদপত্র বা সিগারেট হাতে ব্যালকনিতেই সময় কাটান।

মুক্ত জিম্মির সন্তান যা বললেন
নোয়াম সাগি জানিয়েছেন তার মা হামাসের হাত থেকে মুক্তির পর তিনি ভিডিও কলে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তাকে ভালো দেখাচ্ছিল, তিনি ছিলেন খুবই খুশী,” তিনি বলছিলেন বিবিসি সংবাদদাতাকে। তবে তার মতে তার মা এখনো অনেক কিছুই জানেন না। তিনি জানেন না যে তার ফিরে যাওয়ার ঘর নেই। তিনি জানেন না যে তার অনেক বন্ধু খুন হয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক
যে ১০ জন ইসরায়েলি গত রাতে মুক্তি পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৬২ বছর বয়সী ক্লারা মারমানও আছেন। তার বোন গাব্রিয়েলা লেইমবার্গও একই সাথে মুক্তি পেয়েছেন। ক্লারা ছিলেন আর্জেন্টাইন -ইসরায়েলিদের একটি গ্রুপে যেভাবে তার সঙ্গি লুইস হার, ভাই ফার্নান্দো সাইমন মারমানও আছেন। লুইস ও ফার্নান্দো এখনো জিম্মি অবস্থায় আছেন। অবসরপ্রাপ্ত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ক্লারা বয়স্কদের নিয়ে কাজ করেন। তিনি তার কমিউনিটির মধ্যে সুপরিচিত।

মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা রামাল্লায় পৌঁছেছে 
রেড ক্রস জানিয়েছেন যে ১১ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তির পর পশ্চিম তীরের রামাল্লায় নেয়া হয়েছে। তবে সংস্থাটি আগেই জানিয়েছে তারা শুধু মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং তারা কখনো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে না।